হকিং ও স্যাসকিন্ডের অসমাপ্ত ব্ল্যাকহোল যুদ্ধ

আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার একটা ফলাফল হলো ব্ল্যাকহোল। এই ব্ল্যাকহোলের একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে যেটা হুট্ করে চোখে নাও পড়তে পারে। সেটা হলো, ব্ল্যাকহোল শুধু পদার্থই গ্রাস করে না, সেইসাথে স্থানকালকেও গিলতে থাকে। আশপাশে কোনো পদার্থ না থাকলেও ব্ল্যাকহোল ক্রমাগত স্থানকাল খেতেই থাকে। এতে, ব্ল্যাকহোলের ভেতরে স্থানকাল অবিরাম প্রসারিত হয়, এবং ব্ল্যাকহোলের ঘনত্ব বাড়তে থাকে। ব্যাপারটা মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গে LIGO/VIRGO-এর বাহুগুলোর দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন ঘটার মতো (বাস্তবে, LIGO/VIRGO-এর পুরো ত্রিমাত্রিক আকার বা ঘনত্বের পরিবর্তন হয়)। ব্ল্যাকহোলের ক্ষেত্রে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, স্থানকালের প্রসারণে ব্ল্যাকহোলের ঘনত্ব বাড়ে; কিন্তু, ঘটনা-দিগন্তের আকার বাড়ে না।

সংক্ষেপে, ব্ল্যাকহোলের “ঘনত্ব” বাড়ে অভ্যন্তরীণ স্থানকালের প্রসারণের জন্য। ঘটনা-দিগন্তের “আয়তন” বাড়ে ভর বৃদ্ধির জন্য, এবং ব্ল্যাকহোলের ভর বাড়ে পদার্থ গ্রাসের মাধ্যমে।
ব্ল্যাকহোল ফিজিক্সের জটিলতা শুরু হয় যখন স্টিফেন হকিং ব্ল্যাকহোলের ওপর কোয়ান্টাম মেকানিক্স প্রয়োগ করতে শুরু করেন। ওনার একটা বিখ্যাত ধারণা ছিলো “ব্যাকহোল বাষ্পায়ন” ( black hole evaporation)। ব্যাপারটা সংক্ষেপে এরকম:

হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতির একটা রূপ হলো শক্তি ও সময়ের অনিশ্চয়তা। এই নীতি অনুসারে, সময়কে নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা হলে শক্তির পরিমান অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তাই, ভ্যাকুয়ামে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে শক্তির পরিমান শূন্য হতে পারে না। তাই নীতির একটি পরিণত হলো, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন, এই প্রক্রিয়ায় ভ্যাকুয়ামে প্রতিনিয়ত কণা-প্রতিকণা জোড়া তৈরি হয়। এবং শক্তির সংরক্ষণ নীতি বজায় রাখা জন্য প্রায় সাথে সাথে নিজেদের বিনাশ করে।

১৯৭৪ সালে হকিং ধারণা দেন যে, ঘটনা-দিগন্তে এই ভার্চুয়াল কণা-প্রতিকণাদের একটি ব্ল্যাকহোলের ভেতরে গিয়ে পড়ে। অন্যটি বিকিরণ হিসেবে ব্ল্যাকহোল থেকে বেরিয়ে যায়, যাকে বলে হকিং বিকিরণ। হকিং দেখান যে, শক্তির সংরক্ষণ নীতি বজায় রাখার জন্য, প্রতিকণারা ব্ল্যাকহোলের ভেতরে পড়ে, অন্যদিকে কণারা বেরিয়ে যায় হকিং বিকিরণ হিসেবে। ভার্চুয়াল প্রতিকণারা প্রতিনিয়ত ব্ল্যাকহোলে পড়ার কারণে ব্ল্যাকহোল ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে থাকে, এবং একসময় আস্ত ব্ল্যাকহোল উধাও হয়ে যায়।

ব্ল্যাকহোলের হকিং বিকিরণ ও বাড়ন্ত ঘনত্ব একটি বিশেষ প্যারাডক্স তৈরি করে। ধরা যাক, কোনো বস্তুকে ব্ল্যাকহোলে ফেলে দেয়া হলো। তবে, ব্ল্যাকহোলের বাহিরে থাকা দর্শকের দৃষ্টিতে বস্তুটি ঘটনা-দিগন্তে আটকে যাবে। ধীরে ধীরে বস্তুটি ঘটনা-দিগন্তের পুরো পৃষ্ঠ জুড়ে সমানভাবে ছড়িয়ে যাবে, এবং ধীরে ধীরে হকিং বিকিরণের মাধ্যমে বস্তুটি ঘটনা-দিগন্ত থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে।

কিন্তু, ব্ল্যাকহোলের ভেতরে থাকা দর্শকের অভিজ্ঞতা হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। দর্শকটি দেখবেন যে, বস্তুটি কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই ঘটনা-দিগন্ত অতিক্রম করবে। সেইসাথে, ব্ল্যাকহোলের ঘনত্ব বাড়ার সাথে সাথে বস্তুটির আকার বাড়তে থাকবে। যেহেতু, ব্ল্যাকহোলের ভেতর স্থানকালের বিরামহীন প্রসারণ ঘটে, তাই বস্তুটি কখনোই সিঙ্গুলারিটিতে পৌঁছুতে পারবে না। ফলে, বস্তুটি ক্রমাগত বিশাল থেকে বিশালতর হতেই থাকবে।

ফিজিক্সের দৃষ্টিতে, দুই দর্শকের ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার মানে হলো: ঘটনা-দিগন্ত বরাবর বস্তুটির দুটি প্রতিলিপি তৈরি হয়। একটি প্রতিলিপি বাহিরের দর্শকের দৃষ্টিতে ঘটনা-দিগন্তে উবে যায়। অন্য প্রতিলিপি ভেতরের দর্শকের দৃষ্টিতে বিরামহীন বাড়তে থাকে। সমস্যা হলো, কোয়ান্টাম ইনফরমেশন থিওরির একটি মৌলিক নীতি- No-cloning theorem অনুসারে, কোয়ান্টাম অবস্থার হুবুহু প্রতিলিপি তৈরি করা যায় না।

লিওনার্ড স্যাসকিন্ড ১৯৯৩ সালের দিকে “ব্ল্যাকহোল কমপ্লিমেন্টারিটি” (Black hole complementarity) ধারণা প্রস্তাব করেন। ধারণাটি কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রেটেশনের সাথে সম্পর্কিত এবং হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতির সাথে মিল আছে। অনিশ্চয়তার নীতি অনুসারে, কোনো কণার “অবস্থান” ও “ভরবেগ” একই সাথে নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা যায় না। স্যাসকিন্ড বলেন যে, ঘটনা-দিগন্তের উভয় পাশে দর্শকদের আলাদা আলাদা অভিজ্ঞতা সঠিক। তবে, একই দর্শকের পক্ষে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতাগুলো একইসাথে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। ফলে, এমন দর্শক পাওয়া সম্ভব নয় যিনি ঘটনা-দিগন্তের বাহিরে বস্তুটিকে উবে যেতে দেখবেন, সেইসাথে ঘটনা-দিগন্তের ভেতরে বস্তুটিকে বড় হতে দেখবেন। ফলে, No-cloning theorem লঙ্ঘন হবার কোনো সম্ভাবনা নেই।

কিন্তু, জোসেফ পোলচিনস্কি ও তিন সহযোগী ২০১২ সালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যেটা AMPS পেপার নাম পরিচিত। তাদের গবেষণা ব্ল্যাকহোল কমপ্লিমেন্টারিটি ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। গবেষণাপত্রটির মূল প্রতিপাদ্য হলো,
হকিং বিকিরণের জন্য দায়ী ভার্চুয়াল কণা-প্রতিকণাগুলো কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলড অবস্থায় থাকে। কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট দুই বা দুইয়ের বেশি কণা মধ্যে হতে পারে। তবে, হকিং বিকিরণের ক্ষেত্রে এনট্যাঙ্গেলমেন্টের ধরণ “একগামী” (monogamous); অর্থাৎ, এই এনট্যাঙ্গেলমেন্ট শুধু একটি কণা ও একটি প্রতিকণার মধ্যে সীমিত।

ব্ল্যাকহোলের একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো, হকিং বিকিরণের কণাগুলো “সময়ের ব্যবধানে” এনট্যাঙ্গেলড অবস্থায় থাকে। ধরা যাক, “t” সময়ে কোনো ব্ল্যাকহোল বাস্পায়িত হয়ে অর্ধেক হয়ে গেলো। তাহলে, t-সময়ের “পরে” যে কণাগুলো বিকিরিত হবে সেগুলো t-সময়ের “আগে” বিকিরিত হওয়া কণার সাথে এনট্যাঙ্গেলড অবস্থায় পাওয়া যাবে। এটা কেম্নে সম্ভব আমি জানি না। তবে, এর গাণিতিক প্রমান স্যাসকিন্ড নিজেই দিয়েছিলেন।

ধরা যাক, ঘটনা-দিগন্ত বরাবর A, B ভার্চুয়াল কণা-প্রতিকণা জোড়া তৈরি হলো। এদের মধ্যে A হলো প্রতিকণা যেটা ব্ল্যাকহোলে গিয়ে পড়বে। অন্যটি B, যেটা হকিং বিকিরণ হিসেবে বেরিয়ে যাবে। আরো ধরা যাক, C আরেকটি কণা যেটা ইতিমধ্যেই হকিং বিকিরণ হিসেবে বেরিয়ে গেছে। পোলচিনস্কি দেখান যে, ব্ল্যাকহোলের বাহিরে দর্শক B ও C-কে এনট্যাঙ্গেলড দেখতে পাবে। ঐ একই দর্শক যদি ঘটনা-দিগন্ত অতিক্রম করে এবং A পরিমাপ করে, তবে A ও B-কে এনট্যাঙ্গেলড অবস্থায় পাবে। অথচ, B একই সাথে A ও C -এর সাথে “একগামী” এনট্যাঙ্গেলড অবস্থায় থাকতে পারে না।
এই AMPS প্যারাডক্সের মানে হলো, একক দর্শকের পক্ষে ঘটনা-দিগন্তে উভয় পাশের পরস্পরবিরোধী অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। যেটা ব্ল্যাকহোল কমপ্লিমেন্টারিটির মাধ্যমে সুরাহা করা সম্ভব নয়।

অনেকেই ধারণা দেন যে, ঘটনা-দিগন্ত অতিক্রম করার সাথে সাথে ভার্চুয়াল কণা-প্রতিকণাদের এনট্যাঙ্গেলমেন্ট ভেঙে যায়, ফলে ঘটনা-দিগন্ত বরাবর বিপুল পরিমানের শক্তি জমা হয়, যেটা আগুনের দেয়ালের মতো কাজ করে, যাকে বলে “ব্ল্যাকহোল ফায়ারওয়াল” (black hole firewall)। কোনো দর্শক ঘটনা-দিগন্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করলে এই ফায়ারওয়াল তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে। ব্ল্যাকহোল ফায়ারওয়াল যদিও ঘটনা-দিগন্তে No-cloning theorem রক্ষা করে, তবে ধারণাটি সাধারণ আপেক্ষিকতার জন্য সমস্যা।

সাধারণ আপেক্ষিকতার একটি মৌলিক ধারণা হলো “ত্বরণ ও মাধ্যাকর্ষণ একই জিনিস”, এর নাম সাম্যতার নীতি (equivalence principle)। এজন্যই কোনো দর্শকের পক্ষে মুক্ত-পতন ও মুক্ত-ভাসমান অবস্থার মধ্যে পার্থক্য বের করা সম্ভব নয়। যেমন, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আমরা নভোচারীদের ভাসমান অবস্থায় দেখি, যদিও বাস্তবে তারা পড়ন্ত অবস্থায় থাকেন। এই সাম্যতার নীতি ঘটনা-দিগন্তেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ, ঘটনা-দিগন্ত অতিক্রম করার সময় কোনো দর্শকই বুঝতে পারবে না যে, সে মুক্ত-ভাসমান থেকে মুক্ত-পতন অবস্থায় পড়েছে। অথচ, ব্ল্যাকহোল ফায়ারওয়ালের কারণে দর্শক ঘটনা-দিগন্ত বরাবর আচমকা আগুনের মধ্যে গিয়ে পড়বে, যেটা সাম্যতার নীতির লঙ্ঘন।

একূল ওকূল দুকূল বাঁচাতে; মানে, ঘটনা-দিগন্তে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও আপেক্ষিকতা বাঁচতে, ২০১৩ সালে স্যাসকিন্ড ও ম্যালদাসেনা একটি বিখ্যাত গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যার শর্টহ্যান্ড ER = EPR।

ER ও EPR হলো আইনস্টাইন ও তার দুই সহযোগীদের আলাদা দুটি গবেষণাপত্র, দুটোই প্রকাশিত হয় ১৯৩৫ সালে। ER লিখেছেন আইনস্টাইন ও নাথান রোজেন। EPR -এর লেখক আইনস্টাইন, রোজেন, ও বরিস পোডোলস্কি। ER হলো, আইনস্টাইন-রোজেন ব্রিজ, যার বিখ্যাত নাম “ওয়ার্মহোল”। অন্যদিকে, EPR হলো “কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট”। EPR গবেষণাপত্রে আইনস্টাইন প্রমান করতে চেয়েছিলেন যে, কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্টের মাধ্যমে আলোর চেয়ে বেশি গতিতে বা সুপারলুমিন্যাল যোগাযোগ সম্ভব, যেটা আপেক্ষিক তত্ত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ঐ গবেষণাপত্রে আইনস্টাইন ধারণা দিয়েছিলেন যে, আপেক্ষিকতা লঙ্ঘন না করেই কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্টের মাধ্যমে সুপারলুমিন্যাল যোগাযোগ সম্ভব, এর জন্য দরকার “হিডেন ভ্যারিয়েবল”। কিন্তু, পরবর্তীতে পরীক্ষণের মাধ্যমে হিডেন ভ্যারিয়েবল ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। অন্যদিকে, ER = EPR -তে স্যাসকিন্ড ধারণা দিয়েছেন যে, ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে সুপারলুমিন্যাল যোগাযোগ সম্ভব। তার মতে, এনট্যাঙ্গেলড কণারা ঘটনা-দিগন্ত এড়িয়ে সরাসরি ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে একে অন্যের সাথে যুক্ত থাকে। সুতরাং, যেহেতু কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্টকে ঘটনা-দিগন্ত অতিক্রম করতে হয় না, সেহেতু এনট্যাঙ্গেলমেন্ট ভেঙে ব্ল্যাকহোল ফায়ারওয়াল তৈরি হবার প্রয়োজন নেই।

ER = EPR: ঘটনা-দিগন্তের ভেতরের ও বাহিরের এনট্যাঙ্গেলড কণারা অক্টোপাসের শুঁড়ের মতো ওয়ার্মহোলের দিয়ে যুক্ত থাকে। যদিও, এই ওয়ার্মহোল দিয়ে ব্ল্যাকহোলের ভেতর থেকে পদার্থ বেরুতে পারে না।

অন্যদিকে, ব্ল্যাকহোল বাষ্পায়ন নিজেই একটা বিরাট সমস্যা। হকিং দেখিয়েছেন যে, হকিং বিকিরণের সাথে ব্ল্যাকহোলের গিলে ফেলা বস্তুর কোনো সম্পর্কই নেই। এই বিকিরণ পুরোপুরি রান্ডম। এরমানে, ব্ল্যাকহোলের ভেতরকার বস্তু কোনোভাবেই বাহিরে বেরুতে পারবে না। ফলে, ব্ল্যাকহোল উধাও হয়ে যাওয়া মানে হলো, ব্ল্যাকহোলের সমস্ত বস্তু সেই সাথে তাদের “তথ্য” ধ্বংস হয়ে যাওয়া। বস্তুত, মানুষের জানা মতে, হকিং বিকিরণই একমাত্র প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে তথ্যের বিনাশ বা ধ্বংস সম্ভব। সমস্যা হলো, কোয়ান্টাম ওয়েভ-ফাঙ্কশন তথ্য সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করে, যেটা কোয়ান্টাম ইনফরমেশন থিওরির আরেকটি মৌলিক নীতি No-hiding theorem-এর সাথে সম্পর্কিত।

১৯৭৮ সালের দিকে গেরার্ড হুফ্ট ও স্যাসকিন্ড ধারণা দেন যে, ব্ল্যাকহোলে পড়ন্ত কণা ও বেরিয়ে যাওয়া কণাদের মধ্যে অতি অল্পসময়ের জন্য ইন্টারঅ্যাকশন হয়। ঘটনা-দিগন্তে এই ক্ষণিকের ইন্টারঅ্যাকশন স্থানকালে সূক্ষ্ম ফ্লাকচুয়েশন তৈরি করে। স্যাসকিন্ডের মতে, ঘটনা-দিগন্তের পার্টিকেল-ইন্টারঅ্যাকশন ও মাধ্যাকর্ষণের ফ্লাকচুয়েশন থেকে ব্ল্যাকহোলের ফিজিক্স বর্ণনা করা সম্ভব। তাদের এই ধারণার নাম “হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপল”।

তবে, হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপলের যথাযত গাণিতিক ভিত্তি আসে “গেইজ-গ্র্যাভিটি ডুয়ালিটি” নামের তাত্ত্বিক ফ্রেমওয়ার্ক থেকে। এই ফ্রেমওয়ার্কের গেইজ অংশটি হলো কোয়ান্টাম তত্ত্ব; প্রতিটি কোয়ান্টাম ইন্টারঅ্যাকশনের কারণ কোনো না কোনো গেইজ সিমেট্রি বা প্রতিসাম্যতা। অন্যদিকে, গ্র্যাভিটি অংশটি মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব। এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্কটি একক (one to one corresponding)।

১৯৯৭ সালে আর্জেন্টাইন পদার্থবিদ জুয়ান ম্যালদাসেনা দ্বিমাত্রিক কোয়ান্টাম তত্ত্ব এবং ত্রিমাত্রিক স্থানকালের ভেতর একটি বিশেষ গেইজ-গ্র্যাভিটি ডুয়ালিটির প্রস্তাব করেন, যার নাম ম্যালদাসেনা ডুয়ালিটি বা ম্যালদাসেনা কনজেক্সার। এর ভিত্তিতে পরবর্তীতে যে হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপলগুলো তৈরি হয় তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো, AdS/CFT corresponding।
AdS/CFT তত্ত্বের AdS হলো “এন্টি-ডি সিটার” স্থানকাল (Anti-de Sitter)। এবং, CFT হলো Conformal field theory, যেটা একটা কোয়ান্টাম তত্ত্ব। তবে, ম্যালদাসেনা কনজেক্সারের মতো AdS/CFT শুধু ত্রিমাত্রিক স্থানকাল এবং দ্বিমাত্রিক কোয়ান্টাম প্রক্রিয়ায় সীমিত নয়। AdS/CFT- থেকে চতুর্মাত্রিক স্থানকালের সাথে ইয়াং-মিল তত্ত্বের সম্পর্ক পাওয়া সম্ভব ( উল্লেখ যে, স্ট্রং-ইন্টারঅ্যাকশন, যেটা থেকে গ্লুয়ন কণা পাওয়া যায় এবং উইক-ইন্টারঅ্যাকশন যেটা থেকে Z ও W কণা পাওয়া যায় দুটোই ইয়াং-মিল তত্ত্ব)।

গেইজ-গ্র্যাভিটি ডুয়ালিটি দিয়ে ব্ল্যাকহোলের উদ্ভব ও উধাও হওয়া ব্যাখ্যা করা সম্ভব। সেই সাথে হকিং বিকিরণও নিখুঁতভাবে গণনা করা সম্ভব। কিন্তু, ব্ল্যাকহোলের ভেতরের বস্তু কিভাবে ঘটনা-দিগন্ত দিয়ে বেরুবে সেটা ব্যাখ্যা দেয়া গেইজ-গ্র্যাভিটি ডুয়ালিটির পক্ষে সম্ভব নয়। এন্টি-ডি সিটার স্থানকাল ER=ERP -এর জন্যও প্রযোজ্য। সমস্যা হলো, এই স্থানকালের ওয়ার্মহোল non-traversable। ফলে, যদিও তাত্ত্বিকভাবে কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট এই ওয়ার্মহোল ব্যবহার করতে পারে; কিন্তু বস্তু চলাচল এই ওয়ার্মহোল দিয়ে অসম্ভব। আরেকটি সমস্যা হলো, এন্টি-ডি সিটার স্থানকালের বক্রতা “ঋণাত্মক”, কিন্তু আমরা যে মহাবিশ্বে থাকি তার স্থানকালের বক্রতা “ধনাত্মক”। ফলে, ER=ERP এবং AdS/CFT -এর ব্যবহারিক দিক নিয়ে সংশয় আছে।

বলা যায়, হকিংয়ের সাথে স্যাসকিন্ডের “ব্ল্যাকহোল-ওয়ার” এখনো অসমাপ্ত।

(২০০৮ সালে স্যাসকিন্ডের একটা বই বের হয় নাম, “The Black Hole War: My Battle with Stephen Hawking to Make the World Safe for Quantum Mechanics”)